হিন্দু প্রথা যা আজ বিলুপ্ত হয়েছে, ইংরেজরা আইন করেছে বলেই
- শুভ্র সরকার
এ নিবন্ধে আমি কয়েকটি আইনের সংশোধন ও তা হওয়াতে সমাজের মানসিকতার কি পরিবর্তন হয়েছে সে বিষয়টিতে একটু দৃষ্টিপাত করবো। তাহলে আসুন প্রথমে আমি যে আইনের কথা বলছি তা দেখে নেই-
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. হীরালাল যাদবের গবেষনায় উল্লেখ করা হয়েছে- (পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়েছে।)
১♦১৭৭৩ সালে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী রেগুলেটিং এ্যাক্ট পাশ করেছিল। এতে ন্যায় ব্যবস্থা সবার জন্য সমান করার চেষ্টা হয়েছিল। ৬ই মে ১৭৭৩ সালে এ আইনের ধারাতেই বাংলার সামন্ত শাসক ব্রাহ্মণ সমাজের লোক নন্দকুমার দেবকে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছিল।
২♦এক সময় হিন্দুদের মধ্যে জাত প্রথা এত প্রবল ছিল যে শুদ্র'দের কোন সম্পদের অধীকার ছিলনা। অর্থৎ আপনি আমি এখন টাকা হলেই যেমন সম্পদ কিনি, তখন শুদ্র'রা কখনোই কোন সস্পদ কিনতে পারতো না। তাদের নামে সম্পদের রেজেস্ট্রি করারই সম্ভব ছিলো না। ইংরেজরা ১৭৯৫ সালে অধিনিয়ম ১১ দ্বারা শুদ্র'দেরও সম্পত্তি রাখার আইন বানিয়েছিল। মনুসংহিতার সেই ব্রাহ্মন আইনটি (বর্তমানে যাকে হিন্দু আইন বলা হয়) ভারতে ইংরেজরাই সেটির সমাপ্ত ঘটিয়েছিল।
৩♦১৮০৪ সালে ইংরেজরা অধিনিয়ম ৩ দ্বারা কন্যা সন্তান হত্যার বিরুদ্ধে আইন বানিয়েছিল। তখন কন্যা সন্তান হলেই তাদের পরিবারের কেউ একজন বা পরিবারের আদেশে দাই নিজেই হতেই তালুতে আফিম বা ধুতরো লাগিয়ে লুকিয়ে মায়ের স্তনে মেখে দিত। আর সেই দুধ খেলেই ঐ মেয়ে শিশুটি মারা যেত। তাছাড়া মাটিতে গর্ত খোদাই করে তাতে দুধ ঢেলে ঐ মেয়েকে ডুবিয়ে মারারও প্রথা ছিল বহু অঞ্চলে।
৪♦১৮১৩ সালে ইংরেজ সরকার আইন করেছিলো যাতে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেকে শিক্ষার সমান সুযোগ পায়। এর আগে সবাই শিক্ষা গ্রহন করতে পারতোনা। ভাবুনতো, স্কুল কলেজ সবই আছে কিন্তু আপনার ছেলে মেয়ে সেখানে যাবার জন্য যোগ্য নয়। কারন আপনি জাতিতে শুদ্র। আগে ব্রাহ্মন আইন অনুযায়ী শুদ্রদের জন্য শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল।
৫♦শুনতে যতই খারাপ লাগুক মূলত হিন্দু ধর্মে শুদ্র'রা ছিলো দাস শ্রেনির। শুদ্রদেরকে সম্পূর্নরূপে দাস হিসেবে খাটিয়েছে অন্যান্য শ্রেনির লোকেরা। প্রকৃত প্রস্তাবে দাসেরা যেখানে ছিলো এটা তার ভিন্ন দেশ তাই ভিন্ননামে, ভিন্ন উপায়ে, ভিন্ন
ভাবে শুদ্রদেরকে করায়ত্ব করে রেখেছিল ওরা। ১৮১৩ সালে ইংরেজ সরকার দাস প্রথার বিলোপ সাধনের আইন তৈরী করে। আর তাতেই ওদের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পেরেছিল মানব গোটা জাতির একটি অংশ।
৬♦১৮১৭ সালে সমান নাগরিক সুবিধা অধিকারের আইন আরও মজবুত করে। ১৮১৭ সালের পূর্বে জাতির ভিত্তিতে শাস্তির বিধান ছিল। এমন কি কাউকে খুন করলেও ব্রাহ্মণদের জন্য কোন শাস্তি বিধান ছিল না। কেবল শুদ্র'দের কঠোর দণ্ড দেওয়া হত। ইংরেজরা তা রোধ করে সবার জন্য শাস্তির বিধান সমান করেছিল।
৭♦১৮১৯ সালে অধিনিয়ম ৭ দ্বারা ব্রাহ্মণ কর্তৃক শুদ্র রমণীদের শুদ্ধিকরণের বিরুদ্ধে আইন তৈরী করে। তখন শুদ্র'দের বিবাহ হলে শুদ্র বধু স্বামীর ঘরে যাওয়ার পূর্বে কমপক্ষে তিনরাত ব্রাহ্মণকে শারীরিক সেবা দিতে হত। ইংরেজরা আইন বানিয়ে তা বন্ধ করে।
৮♦১৮২৯ সালের ডিসেম্বরে বিধবা দহনের বিরুদ্ধে আইন তৈরী করে। এ আইনের মাধ্যমে সতীদাহ প্রথার বিলোপ করে ছিল। অনেকে বলেন এটা রামমোহন রায় করেছেন। আমি বলবো গ্রেট রামমোহন রায়। কিন্তু ইংরেজরা না চাইলে একা রামমোহন রায় কিছুতেই এ কাজে সফল হতেন না। তাই ইংরেজদেরকেও ক্রেডিট দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তবে এখানেও বলি এ সতি দাহ প্রথাটি কিন্তু শ্রী কৃষ্ণ তৈরি করা করেছিল । সতীদাহ প্রথার স্রষ্টা কৃষ্ণ। মহাভারতের যুদ্ধশেষে লাখ লাখ সৈন্য যখন মারা যায়। আর তাদের যুবতী স্ত্রী'রা রয়ে যায় শূন্য হাতে। কৃষ্ণ তখন অর্জুনকে বিধান দেয় -- "যদি এই সব স্ত্রী'গন বেঁচে থাকে তবে সমাজে ব্যভিচারিতায় ভরে যাবে এবং খাত্রজ বর্ন ধারন করবে। এছাড়া স্বামীর সম্পত্তিতে এদের অধিকার জন্মাবে। তাই এদের মৃত স্বামীর সঙ্গে সহমরন দেওয়া হোক।"
(ব্যাসদেব মহাভারত, সত্যম পাবলিকেশন, 1993 সংস্করন, পৃষ্ঠা-- 473)।
এ প্রথাটির জন্য লক্ষ লক্ষ গৃহ বধুকে জীবন দিতে হয়েছে। যদি আসলেই পাপ পূন্য বলে কিছু থাকতোই তাহলে ওই পাপেইতো কৃষ্ণকে ও অর্জুনকে আজীবন জ্বলতে হতো।
৯♦একই সালে অর্থাৎ ১৮২৯ এ ইংরেজরা দেবদাসী প্রথা বন্ধের লক্ষ্যে আইন তৈরী করে। সে সময় ব্রাহ্মণদের ইচ্ছায় শুদ্র'দের কন্যাদের ব্রাহ্মণদের মন্দিরে সেবার জন্য দিতে হত। মন্দিরের পূজারী তাকে শারীরিক শোষন করত। তার গর্ভে বাচ্চা হলে হরিজন নাম দিয়ে ফেলে দেওয়া হত।
১৯২১ সালের জাতি ভিত্তিতে জনগণনা অনুসারে কেবল মাদ্রাজেই জনসংখ্যা ৪ কোটি ২৩ লাখ ছিল। তার মধ্যে ২ লাখ দেবদাসী ছিল মন্দির সমূহে। এ প্রথা এখনও দক্ষিন ভারতের কোন কোন মন্দিরে পরিলক্ষিত হয়।
১০♦১৮৩০ সালে নরবলি প্রথা বন্ধ করে ইংরেজরা। সে সময় দেবী- দেবতাদেরকে প্রসন্ন করার জন্য ব্রাহ্মণরা মন্দিরে শুদ্র স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের মুন্ডু কেটে বলি দিত।
১১♦১৮৩৩ সালে অধিনিয়ম ৮৭ দ্বারা সরকারী চাকরীতে জাতি বর্ণের প্রাধান্যতা লোপ করে ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে যোগ্যতা অনুসারে নিয়োগের অধিকার আইন পাশ করা হয়। যদিও আজ পর্যন্ত ভারত এ প্রথা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। আইনতো ইংরেজ সরকারই করে দিয়ে গেছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত পুরোপোরি কার্যকর হয়নি এ আইন।
১২♦১৮৩৪ সালে প্রথম ভারতীয় বিধি কমিশন গঠন করা হয়। আইন বানানোর ব্যবস্থা জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও ক্ষেত্রের নিরিখে না হয়ে সবার জন্য একই আইন বানানো ছিল এর উদ্দেশ্য।
১৩♦১৮৩৫ সালে প্রথম পুত্রকে গঙ্গা দান প্রথার বিলোপে আইন তৈরী করা হয়। তার আগে ব্রাহ্মণদের হিন্দু নামে আইন বানিয়ে রেখেছিল শুদ্রের ঘরে যদি প্রথম পুত্র হয় তাকে গঙ্গায় ফেলে দেবে। কারণ সাধারণত: প্রথম পুত্র হৃষ্ট পুষ্ট হয়েই জন্মায়। সে পুত্র ব্রাহ্মণের সাথে লড়াই করতে সাহস না করে তাই গঙ্গা দান প্রথা চালু করেছিল।
১৪♦১৮৩৫ সালে আইন বানিয়ে ইংরেজরা শুদ্র'দের চেয়ারে বসার অধিকার দিয়েছিল। জানেন, এর আগে কিন্তু শুদ্র'দের চেয়ারে বসার অধিকারও ছিলনা।
১৫♦কি হিন্দু, কি মুসলমান আজ যে মেয়েরা স্কুল কলেজে পড়ছে এটার জন্য ইংরেদেরকে বাহবা দিতে হবে। জানি এদেশ বা পাশের দেশে নারী উন্নয়নের অগ্রদূত যাদেরকে বলা হয় তাদেরকে স্যালুট জানিয়েই বলছি, তারাও ওই চেতনাটি পেয়েছিলেন ইংরেজদের নারীদেরকে শিক্ষিত করার মানস এর জন্যই তাদের নিজেদের চেতনা পূর্ণাঙ্গ হয়। ১৮৪৯ সালে কলকাতায় বালিকা বিদ্যালয় জে ই ডি বেটনের দ্বারা স্থাপিত হয়।
১৬♦১৮৫৪ সালে ইংরেজদের দ্বারা ভারতে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। সেগুলি হল কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বন্বে বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাজে বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯০২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনও নিযুক্ত করা হয়েছিল।
১৭♦১৮৬০ সালের ৬ই অক্টোবর ইংরেজরা ইণ্ডিয়ন পেনাল কোড বানিয়েছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা শুদ্র'দের উপর অত্যাচারের অবসান করে লর্ড মেকলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকের জন্য একই ক্রিমিনাল আইন চালু করেন। আগে শাস্তি হোত জাতি / বর্ণ দেখে।
১৮♦১৮৬৩ সালে ইংরেজরা আইন তৈরী করে চড়ক পূজার উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অবশ্য এখনো প্রতি বছরই চরক পূজা চলে। এ আইনটি করে তারা কার্যকর করতে পারেনি। আমি বলবো চেষ্টাই করেনি। সে সময় কোন আলিশান ভবন এবং সেতু তৈরী করতে কোন অসহায় শুদ্র'কে ধরে নিয়ে জীবন্ত বলি দেওয়া হত। ব্রাহ্মন শাসনে পুরোহিতরা প্রথা বানিয়ে ছিল যে - এ পূজা দিলে ভবন এবং সেতু বেশীদিন টিকে থাকবে।
১৯♦১৮৬৭ সালে বহু বিবাহ বন্ধ করতে বাংলার সরকার একটি কমিটি গঠন করেছিল। আপনারাতো জানেন নিশ্চয়ই ঐসময়ে ব্রাহ্মনেরা কত সমান্য কারনে তারা শুধু বিয়ে করে বেরাত। বিয়ের জন্য মেয়েদের বয়স কত বড় একটি বিষয় ছিল তখন। ৮ বছর পার করে ফেললে কোন মেয়েকে কেউ বিয়ে করতো না। এই অজুহাতে ব্রাহ্মনেরা যখন তখন, যেখনে সেখানে, একের পর এক মেয়েকে বিয়ে করে বেড়াত। তখনকার সরকার এটিকে রোধ করার জন্যই এই আইনটি করেছিল।
২০♦১৮৭২ সালে Civil Marriage Act দ্বারা ১৪ বছরের কম বয়সের কন্যাদের এবং ১৮ বছরের কম বয়সের ছেলেদের বিয়ে করা নিষেধ করে দেয়। অর্থাৎ বাল্য বিবাহ রোধ কল্পে এই আইনি তৈরী করে। যেটা এখনো চলছে। অবশ্য বয়সের একটু পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। মেয়েদের ক্ষেত্রে হয়েছে ১৮ বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর।
২১♦ইংরেজরা মাহার এবং চামার রেজিমেন্ট বানিয়ে সেনাবাহিনীতে এ জাতিদ্বয়কে ভর্তি করেছিল। কিন্তু ১৮৯২ সালে ব্রাহ্মণ্যবাদীদের বিদ্রোহে অচ্ছুতদের (SC দের) ভর্তি বন্ধ করে দেয়।
২২♦রেয়ত বাণী পদ্ধতি বানিয়ে ইংরেজরা রেজীষ্ট্রীকৃত প্রত্যেক ভূমিদারকে ভূমির মালিক স্বীকৃতি দিয়েছিল।
২৩♦১৯১৮ সালে সাউথ বরো কমিটিকে ইংরেজরা ভারতে প্রেরণ করেছিল। এ কমিটি ভারতে সব জাতির বিধি মণ্ডলের ( আইন বানানোর সংস্থা) জন্য এসছিল। শাহুজী মহারাজের আগ্রহে অস্পৃশ্য নেতা ভাষ্কর রাও জাধব এবং বঞ্চিত বহুজন নেতা ড. আম্বেদকর সর্বহারাদেরকে বিধি মণ্ডলে ভাগীদারী করার জন্য মেমোরেণ্ডাম দিয়েছিলেন।
২৪♦১৯১৯ সালে ইংরেজরা ব্রাহ্মণদের বিচারক পদে নিয়োগে বাঁধা প্রদান করে। কারণ হিসেবে বলেছিল ব্রাহ্মণদের অন্তরে ন্যায়িক চরিত্র হয় না।
অর্থৎ ব্রাহ্মণরা তাদের নিজ জাতির লোকদেরকে অপেক্ষাকৃত কম স্বাস্তী দিত এবং শুদ্র'দেরকে অপেক্ষাকৃত বেশি শাস্তি দিত।
২৫♦১৯২৭ সালে ইংরেজরা আইন বানিয়ে শুদ্র'দের সার্বজনীন স্থানে যাওয়ার অধিকার দিয়েছিল। অর্থাৎ যা আগে ব্রাহ্মন আইন অনুযায়ী মানা হতোনা বা নিষেধ ছিল। তবে এখনো ভারতে কিছু কিছু মন্দির আছে যেখানে শুদ্র'দেরকে ও মেয়েদেরকে ঢুকতে দেয়না ব্রাহ্মণরা।
২৬♦১৯২৭ সালে নভেম্বর মাসে ইংরেজরা সাইমন কমিশনের নিযুক্তি করেছিল। তাঁরা ১৯২৮ সালে ভারতে সর্বহারা অস্পৃশ্য লোকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাঁদেরকে কিছু বিশেষ অধিকার দেওয়ার জন্য এসেছিল। ভারতের অসহায় সর্বহারা মানুষকে ইংরেজরা যাতে অধিকার না দিতে পারে তার জন্য সাইমন কমিশন ভারতে পৌঁছনোর সাথে সাথেই #মহাত্মা(?) গান্ধী এবং লালা লাজপত রায়রা কমিশনের বিরুদ্ধে জোরদার বিরোধ করেছিলেন। যার কারণে সাইমন কমিশন তাঁদের অসমাপ্ত রিপোর্ট নিয়ে ভারত ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ইংরেজরা ভারতীয় প্রতিনিধিদের ১২ই নভেম্বর ১৯৩০ সালে লন্ডনে গোলমেজ সম্মেলনে (RTC) ডেকেছিল।
২৭♦১৯শে মার্চ ১৯২৮ সালে বিনা পারিশ্রমিকে বেতন কাটানোর বিরুদ্ধে ড. আম্বেদকর মুম্বাই বিধান পরিষদে আওয়াজ উঠিয়েছিলেন । এরপর ইংরেজরা এ প্রথার সমাপ্ত করে।
২৮♦২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ সালে ইংরেজরা ড আম্বেদকরের যুক্তি খন্ডন করতে না পেরে কম্যুনাল এওয়ার্ডের কথা ঘোষনা করেছিল। সেখানে প্রমুখ অধিকার ছিল নিম্নরূপ:-
ক) বয়স্ক মতাধিকার
খ) বিধান মন্ডল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের জনসংখ্যা অনুসারে অস্পৃশ্যদের সংরক্ষনের অধিকার
গ) শিখ, ঈসাই এবং মুসলিমের মত অস্পৃশ্যদেরও ( SC/ST) স্বতন্ত্র নির্বাচন ক্ষেত্রের অধিকার আছে। সেখানে কেবল SC/STরাই দাঁড়াতে পারবে এবং তাঁকে sc/st রাই নির্বাচিত করতে পারবে।
ঘ) প্রতিনিধিদের নির্বাচনের জন্য দু’বার ভোটের অধিকার দেওয়া হয়েছিল SC/STদেরকে । যাতে একবার কেবল নিজেদের সংরক্ষিত প্রতিনিধিদের নির্বাচন করবে এবং দ্বিতীয়বার সাধারণ প্রতিনিধিদের ভোট দেবে।
২৯♦১৯৩৭ সালে ইংরেজরা ভারতে প্রভিন্সিয়ল নির্বাচন করিয়েছিল। যেটায় ব্রাহ্মনরা অশনি সংকেত দেখতে পেয়েছিল।
৩০♦১ লা জুলাই ১৯৪২ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ পর্যন্ত ইংরেজরা ড. আম্বেদকরকে তার যোগ্যতাকে সম্মান দেবার জন্য ভাইসরয়ের কার্যকরী কাউন্সিলে লেবার মেম্বার পদে নিযুক্ত করে। সেখানে থেকে ড.আম্বেদকর লেবারদের শতকরা ৮.৩ সংরক্ষন দিয়েছিলেন।
৩১♦১৯৪২ সালে ড. আম্বেদকর ইংরেজদের কাছে ৫০ হাজার হেক্টর ভূমি অচ্ছুত এবং পিছড়া বর্গদের বন্টনের জন্য আবেদন করেছিলেন। ইংরেজরা তা ২০ বছরের মধ্যে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
৩২♦ইংরেজরা শাসন-প্রশাসনে ব্রাহ্মণের ভাগীদারী শতকরা ১০০ ভাগ হতে ২.৫ ভাগ এ নামিয়ে এনেছিল, যেটা তাঁদের তখনকার জনসংখ্যা অনুপাতে ঠিক ছিল।
এইসমস্ত কারণে ব্রাহ্মণেরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন করেছিলেন কেননা ইংরেজরা শুদ্র এবং মহিলাদের সকল অধিকার প্রদান করার এবং সব জাতিদের সমান অধিকার ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করেছিল। অনেক ক্ষেত্রে তা করেও ছিল।
হ্যাঁ, হিন্দু প্রথা যা আজ বিলুপ্ত হয়েছে ইংরেজরা আইন করেছে বলেই। নয়তো এখনো এ সমাজে সেই হিন্দু আইন-ই বলবৎ থাকতো হয়তো। কিন্তু এ সমাজে তা আজ আর নেই। কেন নেই? তা বন্ধ করার জন্য ইংরেজরা আইন করেছিলো বলে তা আর এখন নেই। কিন্তু ইংরেজদের আইন তখন কি হিন্দুরা সানন্দে মেনে নিয়েছিলো বলে আপনার মনে হয়! কখনোই না। তার বিরুদ্ধে অনেক দানা পাকিয়েছিল, বহু জল ঘোলা করেছিলো, অনেক মানুষকে আইন করার পরেও একই কষ্ট দিয়েছিলো হিন্দুরা। যে স্বভাবটা এখন মুসলিমদের মধ্যে দেখা যায় প্রকটভাবে। অর্থৎ মানবতা- বাদীদেরকে ওরা সহ্য করতে পারেনা। ওদের ধর্মীয় অনেক আইন কানুন, নথি পত্র এখন মানবতাবাদীরা মানতে চায়না, তাই সুযোগ পেলেই মানবতা- বাদীদেরকে মুসলমানরা হত্যা করছে। আর তেমনি তখন হিন্দুদের ওসব ধমীয় আইনকে মানতনা ইংরেজরা। ইংরেজরা যেহেতু ক্ষমতাশালী, ওরা যেহেতু সরকারে তাই ওদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের গলার স্বরটি এতোটা শোনা যায়নি।
অথচ এই জাত প্রথার উদ্ভব ঘটিয়েছিলো কে জানেন? আপনাদের প্রভু, শ্রী কৃষ্ণ। মূখ্যত তার নামই উঠে আসে। কারন হলো সে-ই মানুষের মধ্যে জাত-পাত প্রথাকে এত প্রকটভাবে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। এই কথাটিকে খাতা কলমে লিখে রাখা মতো করে বলে গিয়ে ছিলেন তিনিই। যদিও এর আগেও এই ব্যবস্থাটাই প্রচলিত ছিল সমাজে। এবং তারপর মনু, তার মনুসংহিতা বইটিতে সরাসরি বলেছে শুদ্র'রা ও মেয়েরা বেদ পড়তে পারবেনা, জাগ-জগ্য করতে পারবেনা। অথচ এখনো হিন্দুদের সর্বাধীক মান্যতম গ্রন্থের মধ্যে আছে বেদ ও মনুসংহিতা। বেদ'কেতো হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থও বলা হয়।
হিন্দুদের ইংরেজ বিদ্বেষের অনেকগুলো কারনের মধ্যে এইটিও একটি কারন, তাদের ঈশ্বরের কথাকে ইংরেজরা ঘুরিয়ে দিয়েছে। নতুন আইন করে তাদের ধর্ম ও ধর্মীয় নিয়মকে ঘুরিয়ে দিয়েছে।
হিন্দু ধর্মে গোড়াদের কোমরতো ইংরেজরাই ভেঙ্গে দিয়ে গেছে। এখনো আছে অনেক গোড়ামি তবে শক্তভাবে দ্বাড়াবার পথতো বন্ধ। কারন হিন্দুদের মধ্য থেকে যে গোড়ামিগুলো ইংরেজরা ভেঙ্গে দিয়েছে চোখে আঙ্গুল দিয়ে সেগুলোকে দেখালেই যদি সামান্যতম একটু বোঝবার মত লোক হয় তাহলে আর তর্ক করতে আসেনা।
[কেউ যেন আবার ভুল করেও ভেবে না বসে, আমি ইংরেজদের লোক। তবে ইংরেজরা যেটুকু করে রেখে গেছে তাতো স্বীকার করতেই হবে।]

0 Comments