একাকীত্বের সুখ
- এস এন রাজ
প্রতিটা মানুষের নিজস্ব মনোজগত থাকে। মানুষ যদি বন জঙ্গলের পথেও হাটে সে পথ একদিন সুন্দর হয়ে যায়। ঠিক তেমনভাবে তার নিজের জগতে বিচরণ থাকলে নিজের জগতে অবাধ চলাফেরার পথ হয়ে যায়। কিন্তু আমরা যে ভুলটা করি সেটা হল আমাদের নিজের সেই ভুবন টাকে ভুলে গিয়ে আমরা অন্যের ভুবনে বিচরণ করতে চাই। তারপর কোন একদিন যদি সেই অন্যের জগতটাতে বিচরণের আর অনুমতি না থাকে তখন আবার নিজের জগতে ফিরে আসতে হয়। কিন্তু ততদিনে নিজের জগতের পথ গুলো কন্টকযুক্ত বৃক্ষ দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু আসল বাস্তবতা হলো প্রতিটা মানুষের নিজের জগত ছাড়া আর অন্য কোথাও আশ্রয়স্থল হয় না। এজন্য একাকীত্ব জয় করতে হয়। মানুষ একাকীত্বকে খুব ভয় পায়। একটা ছোট শিশু চায় ,কেউ না কেউ তাকে ঘিরে সর্বক্ষণ থাকুক!! সেই শিশু থেকে কৈশোর কৈশোরের পর যৌবন জীবনের পর বৃদ্ধ অবস্থা। প্রতিটা পর্যায়েই মানুষের উপর নির্ভরশীলতা বাড়তেই থাকে। কিন্তু যারা সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের সাথে মিশে, তারাই একাকীত্বকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। এবং তারাই সবচেয়ে বেশি একাকী যাপন করে। মানুষের একাকিত্বই সত্য। প্রতিটা মানুষ এক ও অদ্বিতীয়। এজন্যই কেউই কারো সাথে শতভাগ মিলবে না। সুতরাং আপনাকে যে কেউ শতভাগ বুঝবে সেটা আশা করা আপনার বোকামি ছাড়া কিছুই না। এজন্য আপনার যদি শতভাগ ভালো লাগা পাওয়ার মত কিছু থাকে সেটা একান্ত আপনার ভিতরেই। আপনি যদি আপনার সবচেয়ে বড় ভালোলাগা হতে পারেন তাহলে এই পৃথিবীতে আপনাকে যন্ত্রণা দিতে পারে এমন শক্তি কারো হাতেই থাকবে না। মানুষের উপর থেকে নির্ভরশীলতা যে যত কমাতে পেরেছে সে তত মুক্ত স্বাধীন হতে পেরেছে। অধিকাংশ মানুষেরই মুক্ত স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করার সুযোগ হয় না। কারণ মানুষ সামাজিক জীব হওয়ার কারনে সামাজিকতার বাইরে চিন্তা করতে পারে না। মানুষ মনে করে এই সমাজে অধিক ক্ষমতা বা অধিক লোকের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে নিজেকে দাড় করাতে পারলে সকল একাকীত্ব ঘুচে যাবে। কিন্তু সত্য এটাই তারাই সবচেয়ে জটিল জীবন যাপন করেও একাকীত্ব কোন ভাবে ঘোচাতে পারে না। মানুষের কেন্দ্রবিন্দু না হতে চেয়ে নিজেই নিজের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে যান। তারাই তো মানুষকে নিয়ে পড়ে থাকে যাদের ভেতরে কিছুই নেই!!! আর যারা নিজের জগৎ পরিচর্যায় ব্যস্ত, তাদের সময়ই নেই অন্যের দিকে তাকানো। যার নিজের ভিতর হিংসা ,সে বাইরে হিংসা দেখতে পায়। যার নিজের ভিতর ক্রোধ, সে ক্রোধ দেখতে পায়। যার ভেতর প্রেম সে প্রেম দেখতে পায়। মোট কথা প্রতিটা মানুষের ভেতরে যা থাকে বাইরে ও সেটাই দেখতে পায়। আসলে পৃথিবীর সুন্দর না, কালোও না, নিষ্ঠুর ও না, প্রেমে ভরাও না। দর্শকের উপর নির্ভর করে পৃথিবী কেমন। সব ছেড়ে নিজের নিজের ভেতর একটা আকাশ তৈরি করুন, কিংবা একটা সমুদ্র তৈরি করুন। নিজেকে একটা বদ্ধ ঘরে রাখবেন না, কিংবা বদ্ধ একটা পানির পাত্রে। বদ্ধ ঘর খুব দ্রুত নোংরা হয়ে যায়, অল্প পানি খুব সহজেই দূষিত হয়ে যায়। আপনি যখন বাইরে কোনভাবে কষ্ট পেয়ে আসবেন, তখন এসে আপনার অন্তর জগতে সেই দূষিত কষ্টগুলোকে চাইলে আকাশে উড়িয়ে দিতে পারবেন চাইলে নিজেকে সাগরে পরিষ্কার করে নিতে পারবেন। আবার পরিচ্ছন্ন মানুষ হয়ে সর্বস্থলে যেতে পারবেন, সবকিছুই সুন্দর লাগবে, কোন কিছুর সাথে আর বিরোধিতা থাকবে না। নিজের হয়ে বাঁচুন, নিজের অন্তরজগতের উন্নতি অপেক্ষায় অধিকতার মঙ্গলজন কিছু আমার চোখে আপাতত নেই।

0 Comments