চাঁদ কথা বলে

- কাকলি চক্রবর্তী 



দুটি ছাদে দুটি ছেলে মেয়ে,

সদ্য যৌবনে পা দেওয়া,

দুটি মন।

প্রেম তাদের শ্বাশত।

দুটি ছাদের মধ্যে বেশ কিছুটা ফারাক,

মধ্যে কয়েকটা বাড়ি

নিতান্ত গো বেচারার মত দাঁড়িয়ে,

সাক্ষী থাকে তাদের প্রেমের,

তাদের দুরন্ত ভালোবাসার।

প্রতিটা বিকাল মুখর হয়ে ওঠে প্রেমের গুঞ্জনে,

নিস্তব্ধ,

তবুও কথার বাঁধ ভাঙে দুজনার মধ্যে।


কী ভাবে যেন একে অপরের মনের ভাষা তারা

পড়ে ফেলতে পারে অবলীলায়।

তাইতো হয় না শব্দের পয়োজন,

কেবল তাকিয়ে থাকাই পেয়ে যায়

সব প্রশ্নের সব উত্তর।


কখন যেন দুটি ছাদ

একেবারেচলে আসে পাশা পাশি।

সদ্য ষোলোয় পা দেওয়া মেয়েটা

স্বপ্ন দেখে,

আঠারো হয়েওঠা ছেলেটার।

স্বপ্ন চলে ছুটিয়ে ঘোড়া

হয়ে পক্ষীরাজ।

ছোট্ট সংসার জমে ওঠে তাদের।

দুজনার দাম্পত্য জীবন

কল্পনায় দেয় পাড়ি বহুদূর।

বিকাল গড়ায়,

সন্ধ্যা নামে,

ধীরে ধীরে অন্ধকার জড়িয়ে ধরে

তাদের দুজন কে।

একটি দুটি তারা ফোটে আকাশে,

ছুটে আসে চাঁদ,

মুছে ফেলতে আঁধারের কালী টুকু।

চাঁদ কথা বলে,

সে দিনের আলো আনতে চায়

অন্ধকার পৃথিবীতে।

দুই ছাদে থাকা

দুটি ছেলে মেয়ে,

একটা সময় আর দেখতে পায় না

একে অপরকে,

অন্ধকারের ঘনত্বে।

শুধু জেগে থাকে আলো আঁধারিতে

দুটি ছাদের আবছা ছবি

স্মৃর্তির অ্যালবামে।

চাঁদ কথা বলে,

অন্ধকারে নেমে আসে চাঁদ

তাদের মাঝখানে।

মৌনতায় বলে যাওয়া ভাষা

মুখর হয়ে ওঠে

প্রেমের স্পন্দনে।


পেড়িয়ে যাওয়া বছর গুলোয়

বদলে যায় অনেক কিছুই।

বিবর্তনের রাস্তায় শুধু পরে থাকে

ধুলোবালি।

অতীত স্মৃতির পোড়া ছাই।


ততো দিনে দুটি বাড়িরও হয়েছে অনেক

পরিবর্তন।

দুটি ছাদ এখন আর সেভাবে দেখতে

পায় না একে অপরকে।

তাদের মাঝে মাথা তুলেছে অনেক

উঁচু উঁচু বাড়ি।

মানুষ বদলে গেলেও

পারেনি বদলাতে দুটি ছাদ।

আজও তারা ব্যস্ত ব্যাকুল চেষ্টা চালিয়ে যায়

একে ওপর কে আকুল হয়ে দেখতে।

একে ওপরের প্রেমে হতে মশগুল,

আবার মাতিয়ে তুলতে সন্ধ্যা আর বিকেল গুলো।


সেই ছেলেটি আর মেয়েটিও আজ ব্যস্ত

নিজেদের জীবনে,

হয়তো তাদের প্রেমও আর নেই।

রয়ে গেছে প্রেম প্রকৃতির,

কথা বলে চাঁদ

প্রকৃতির সাথে,

কথা হয় 

দুটি ছাদ, চাঁদ আর অন্ধকার রাতের।।