সময়ের ব্যবধান

- কাকলি চক্রবর্তী 



থমকে  গেল সময়।

আমার সঙ্গে তার বরাবরের আড়ি।

ঠিক বনিবনা হয় না।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে 

 পায়ে পা মিলিয়ে ছুটে চলা,

আমার হয়ে ওঠে না কোনো কালেই।

কখনো মুখ থুবড়ে পরি,

কখনো বা পথ হারাই,

কখনো বা আনমনা আমি

ঘুড়ে ফিরে পৌঁ
ছে যাই গন্তব্যে।

কিন্তু ঐ যা হয় আর কী,

বড্ড দেরি,

বড্ড অপেক্ষায়।

চলে যাওয়া ভোর,

পেরিয়ে যাওয়া দুপুর,

ছুঁতে না পারা সন্ধ্যা,

আর হারিয়ে যাওয়া রাত,

সময়ের আঘাতে হয় খান খান।

সময় কোনোদিন আমার বন্ধু হতে পারেনি।

তাকে আমি জানিয়ে ছিলাম আমন্ত্রণ,

সাহসে বুক বেঁধে ঝাঁপিয়ে ছিলাম

তার দুরন্ত স্রোতে।

কিন্তু পারলাম কৈ,

সে চলে গেলো দূর বহু দূর,

আর আমি রয়ে গেলাম এ পাড়ে।

মাঝে এক দুস্তর ব্যবধান।

সময় কে বাঁধার দুঃ সাহস

করতে পারিনি কোনোদিন,

সে স্বাধীন বিহঙ্গ ঐ অসীমের মাঝে,

তার নিত্য আসা যাওয়া।

আর আমি?

পেরিয়ে গেছে বছর,

গেছে কিছু বসন্ত।

বিরাট সেই বট বৃক্ষ হয়েছে

আরো বৃদ্ধ,

হাজারো বটের ঝুড়ি ঘিরেছে তাকে

গড়েছে জটাজাল।

প্রাচীন নদী হয়েছে হাঁটু জল,

বদলে গেছে শহর, বাড়ি ঘর,

পথ ঘাট,

বহুতল হয়েছে উচ্চ থেকে উচ্চতর,

ঢেকেছে আকাশ

আজ কাল আর আকাশ দেখা যায় না,

আকাশে ওড়া ঘুড়ির ও দেখা মেলা ভার।

ঐ যে সময়ের ব্যবধান।

সবুজ ঘাসে লেপ্টে জড়িয়ে থাকা

শিশিরে ভেজা মাঠ।

ঢলো ঢলো জলে উপচে পরা পুকুর।

সকল গেছে চলে,

ঐ যে সময়ের ব্যবধান।

অভয়ের চায়ের দোকান,

সোনাইদের পোড়ো বাড়ি,

নেতাইদের আম বাগান,

কেষ্টাদের ঢল ঢলে দীঘি,

চরণদের আকাশ ছোঁয়া বাঁশ বাগান,

সব সব ভ্যানিস হলো চোখের নিমেষে।

ঐ যে সময়ের ব্যবধান।

এ সবই তো সময়ের খেলা।

কখনো থমকে,

কখনো বা প্রবল বেগে,

সে জানিয়ে যায় তার অস্তিত্ব।

বসে বসে শুনি তার স্পন্দন,

টিক  টিক টিক টিক

শুনি সে চলছে,

আর চলছে।

চলছে।