রাজনন্দিনী
- কাকলি চক্রবর্তী
সে আমার রাজনন্দিনী,
সে বন্ধু আমার।
আর নয়তো কেউ।
তার কথা কভু হয়না শেষ।
সকাল হতে দুপুর গড়ায়,
তার কথার বিন্দু সিন্ধু ভরায়,
আমার সকল কাজের ফাঁকে।
তবুও তার কথা কভু
হয় না শেষ,
দিনরাত অবিরত।
সন্ধ্যা বাতি ধূপের ধোঁওয়ায়
আমি দেখি মুখখানা তার
যখন সে থাকে
আপনি ভুলে,
অবগাহনে নদীর প্রবল স্রোতে।
এমনি ভাবে দিনে দিনে,
বাল্য হতে কৌশর,
কৌশর হয়ে পার
আমরা যৌবনে উপনীত।
তবুও হয় না শেষ তার অবাধ মুখরতা।
কখনো কখনো তার কথা
ইঙ্গিত দিয়ে যায় বহু কিছুর,
আমি সব বুঝেও করি,
না বোঝার অভিনয়।
অবশেষে একদিন সেই রাজনন্দিনী
গেল স্বশুর ঘর।
নব বধূর সাজে বিদায়ের কালে
ফিরে তাকিয়ে ছিল সে।
কাকে খুঁজছিলো তার চোখ?
আমার ঘর ও যেন শূন্য।
সে তো কেউ ছিলোনা আমার।
তার অবিরাম মুখরতায়
আমি কতবার হয়েছি বিরক্ত।
কতবার তাকে বলেছি চলে যেতে।
পাড়া পড়শী ছাড়া
আরতো কিছুই ছিলনা সে।
তবে কেন তার শূন্যতায় শূন্য আমিও ?
শূন্য আমার ঘর দোর?
একদিন দারুন মুখর আমারো বাড়ি,
ততোধিক মুখর আমার ঘর।
আমিও আর একা নই,
হয়েছে আমারো সংসার।
আলতা পায়ে নূপুরের রিনি ঝিনি
এখন সর্বক্ষণ আমার আশে পাশে।
সকাল হতে রাত্রি,
কখন যে যায় কালের স্রোতে
হৃদয়ের আর্তনাদ।
সকল আছে,
সকল মাঝে,
জনবহুল কলরবে।
তবুও কেন,
মোর বিজন মনে
কেবলি চলে,
প্রবল হা হুতাশ?
তার সেই অবাধ মুখরতা,
তার কখনো শেষ না হওয়া
কথার ঝাঁপি,
তার সেই অবিরাম বক বক,
আমার যেন তার সেই
কলরবেই বসবাস।
সে না থেকেও রয়ে গেছে
জীবনে আমার,
আমার সবটুকু জুড়ে
কেবল তারই অবস্থান।

0 Comments