ভিক্ষুক (২)
- কাকলি চক্রবর্তী
আমিও পথের পাশে একটি ধারে তোমারি অপেক্ষায়।
এগিয়ে আসছে তোমার রথ
একটু একটু করে।
দু ধারে পথের মানুষের ঢল উপচে পরে,
শুধু একটি বার তোমার দর্শনের জন্য।
হাতে তাদের ফুল,
চোখে বাঁধভাঙা আনন্দের উচ্ছাস।
আমি তাদের চিৎকার করে বলি,
"ওগো মানুষের দল,
যদি ওই পরাজিত রাজ্যের মানুষের মত কোনোদিন তোমাদের অবস্থা হয়?
সেদিনও কী ঠিক এমনি করবে উল্লাস?
এমনি দেবে জয়ধ্বনি?
যে রথের চাকা বহু রক্তের ধারা মাড়িয়ে
আসছে চলে,
তাকে কি এভাবেই করবে সম্মান?"
ক্রমে ক্রমে এগিয়ে এলো রথ,
একেবারে আমার সামনে এসে থমকে দাঁড়ায়।
বোধহয় আমার ভিক্ষুকের পোষাক,
ভিক্ষার ঝুলি দেখেই,
রথ থমকে দাঁড়ালো।
রাজার গুরু গম্ভীর দরাজ কণ্ঠস্বর,
বলে উঠলো,
"কী চাই তোমার?
বলো ভিক্ষুক? কী চাই তোমার?
আজ যা চাইবে তাই পাবে,
শূন্য হাতে ফিরতে হবেনা আর।"
প্রবল পরাক্রমী বিজয়ী রাজার অগ্নীগর্ভ স্বরে
আমায় উদ্দেশ্য করে বলা কথাগুলি,
যেন তার দম্ভ আর অহংকারের আস্ফালন।
মাথা নতকরে বলি,
"মহারাজা তোমারে প্রণাম,
আমি এই দেশের নই কেউ,
আমার বহু দূর হতে আগমন।
আমার শূন্য ঝুলি পূর্ণ করুন রাজন,
শুধু এই টুকু প্রার্থনা।"
বিজয়ী রাজার উন্নত বপু আরো উন্নত হলো।
প্রশস্ত হাসি হেসে বললো সে,
"ভয় পেয়োনা ভিক্ষুক,
বলো, বলো কী চাই তোমার?"
আমি অভয় পেয়ে বলি,
"কিছু কথা বলতে চাই রাজন।
আমি এক সময় ছিলাম রাজা,
আজ আমি পথের ভিক্ষুক।
শুধু একটি বার আপনি আমার স্থানে
আসুন মহারাজ,
আমি আপনার স্থানে যাই।
শুধু এই টুকু চাই।"
খানিক ভাবলেন রাজা,
নেমে এলেন রথ থেকে।
আমার হাত ধরে নিয়েগেলেন রথে।
আমায় বসালেন রাজার আসনে,
তিনি বসলেন আমার
পদতলে।
তার চোখের জলে ভেসে যায় তার
রাজ পোষাক।
শান্ত কণ্ঠে বললেন,
"আপনার রাজ্য আমি ফিরিয়ে দেবো রাজা,
ফিরিয়ে দেবো সব,
যা কিছু নিয়েছি কেড়ে।"
বিজয়ী রাজার আশ্বাসে
আমি ফিরে চললাম আপন গৃহে।
রাজা হাঁকলেন,
"কে আছো?
ফিরে চলো রথ নিয়ে।
যে রাজ্য এসেছি স্বশান করে,
রথ নিয়ে চলো সেইখানে।
বহু কাজ পরে আছে বাকি।"
ফিরে গেল স্বর্ণ রথ সেই পরাজিত
দেশের পানে।
পথের মানুষ অবাক হয়ে ফিরে যায়
যে যার গৃহে।
রাজা চলেন স্বর্ণ রথে,
এক ভিক্ষুকের রূপ ধরে।।
সমাপ্ত।
0 Comments