একটি অসমাপ্ত গল্প ও একটি চিঠি (১)
- কাকলি চক্রবর্তী
প্রিয় নন্দীন,
তোমার নন্দিনী নামটায় আমার আপত্তি,
কারণ সে নামে তোমায় সবাই ডাকে।
তাই তুমি আমার কাছে,
আমার "নন্দীন "।
কেমন আছো?
প্রায় একটা সপ্তাহ হবে
তোমায় দেখিনি।
আমি চলে যাচ্ছি নন্দীন।
আশা করি আমার চলে যাওযায়
তুমি খুব খুশি হবে।
তুমিও তো এটাই চেয়েছিলে,
তাই না?
তোমার কাছে বা সকলের কাছে
আমাদের প্রেম অসম হলেও,
আমার কাছে শ্বাশত, পবিত্র।
তুমি বলেছিলে,
তোমার শহর,
আর এই দেশ ছেড়ে,
যেন চলে যাই।
নন্দীন তোমার আর আমার মাঝের
বয়সের দূরত্ব,
আজ থেকে পরিবর্তিত হলো,
সময় আর পথের দূরত্বে।
কিন্তু প্রেম?
সে কী বোঝে দূরত্বের মানে?
সে কী বোঝে বয়সের ব্যবধান?
কলঙ্ক বা পবিত্রতা?
নিয়ম বহির্ভুত ভালোবাসা কী
ভালোবাসা নয়?
ভেবে চিন্তে গতানুগতিক পথে স্বছন্দে চলে
যে প্রেম,
তাকে কী প্রেম বলা যায়?
যাক সে কথা,
এ সব কথা তো এর আগেও
আমাদের মধ্যে বহুবার হয়েছে।
আজ না হয় এই সব আলোচনা
নাই করলাম।
তোমার কথার মান রাখতে
আমি চলে যাচ্ছি নন্দীন।
গৌরব একটি বার ও
আমার মুখোমুখী হলো না,
হয়তো তার সাথে আমার যে সংঘাত
সেই কারণেই।
তোমার ছেলে ঠিক তোমার মতই,
হতে পারে সে আমার বন্ধু।
তুমি বলেছো,
সবাই সবটা জেনেছে।
সবটা,,,,,,,,,,?
কারোর জীবনের বা মনের
সবটা কী জানা যায়?
তুমি আরো বলেছো,
আমাদের সম্পর্ক ভারি লজ্জার।
কারণ আমি তোমার ছেলে
গৌরবের বয়সি,
তার বন্ধু।
তাই সমাজ সংসার আমাদের লাঞ্চিত করেছে,
দিয়েছে অভিশাপ।
না,
না, নন্দীন।
এ তোমার ভুল ধারণা।
সমাজ সংসার এতদিন তোমায়
ব্যবহার করেছে,
তাদের প্রয়োজনে।
তোমার স্বামী,
তোমার সংসারের প্রতিটি মানুষ
শুধুমাত্র তোমায় ব্যবহার করেছে।
শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি।
তমিও সবটা জানো, বোঝো।
তাই না?
আসলে আমরা নিজেরাই ব্যবহার হই,
আপনজনেদের কাছে,
কারণ এতেই আমাদের আনন্দ।
কিন্তু কেউ তো তোমার মনের খোঁজ রাখেনি।
কেউ না।
এও কী লজ্জার নয়?
প্রতিটি মানুষ চেয়েছে,
তুমি তাদের প্রয়োজন মত হয়ে ওঠো।
তোমার প্রতিটি নিঃশ্বাস তাদের দিন যাপনের
অক্সিজেন যোগাবে।
আর তুমি?
তুমি কী চাও কেউ ভেবেছে?
এও কী অপমানের নয়?
তুমি বলেছিলে তুমি এ ভাবেই সুখী,
আপনজনেদের মাঝেই তো সুখ।
মেয়ে মানুষের আবার পৃথক সুখের
কী বা প্রয়োজন।
আজও কী ঠিক সেই কথাই বলবে?
ক্রমশঃ

0 Comments