সত্যি ঘটনা অবলম্বনেঃ
গ্রহণ (১)
- কাকলি চক্রবর্তী
আমি রাত্রি।
এটা আমার প্রকৃত নাম নয়।
কারণ প্রকৃত নাম বলা সম্ভব নয়।
এটা আমার জীবনের গল্প।
কেউ তো জানুক আমার জীবনের গল্প,
যা আমি বলতে পারিনি কাউকে।
ছোট্ট মেয়ে বেলায় বাজের শব্দে
বাবার মুখে গুঁজে দিতাম মুখ,
পরম নির্ভরতায়।
স্কুলে যেতে বা আসতে বিভিন্ন বায়নার কেন্দ্রস্থলও
ছিলেন বাবা।
ছেলেবেলায় বাবাকে মনে হত
তরবারি হাতে এক রাজা,
যে আমায় সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করবে।
আসলে মায়ের শাসনের তুলনায়
বাবার শাসন ছিল খুবই
তাই বাবার আশ্রয় বড়ই বিশ্বাসের জায়গায় ছিল।
আমার বয়স বারো বছর পূর্ণ হবার মধ্যে
অনেক বদল ঘটে গেল।
মা রুগ্ন হলেন,
বাতের রোগে আশ্রয় নিলেন বিছানায়।
একেবারে নড়া চড়ার ক্ষমতা টুকুও হারালেন।
সে দিন খুব কাঁদলাম মাকে জড়িয়ে।
মা আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন,
"তুই কোথাও পালিয়ে যা,
নইলে মরে যা।"
আমি ভয় পেয়ে বলি,
"কেন মা? কেন?
কেন তুমি এমন করে বলছো?"
মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে গেলাম,
মা আমায় ঠেলে সরিয়ে দিলেন।
আমি বুঝলাম,
মা শারীরিক যন্ত্রনা আর অবসাদে
এমন আচরণ করছেন।
এর পর মা প্রায় বোবা হয়ে গেলেন।
কাছে গেলেই বলতেন,
'মরে যা, মরে যা '।
আমার দিকে ফিরেও চাইতেন না।
আয়ারা মায়ের দেখাশোনা করতেন।
এমন খিটখিটে হয়ে পরলেন যে
আয়ারাও আর কাজ করতে চাইতেন না।
আমি নিলাম মায়ের ভার।
স্কুল, লেখাপড়ার সময় টুকু ছাড়া
বাকি সময় টা মায়ের দেখাশোনা আর
সংসারের কাজেই কেটে যেত।
কেন যেন,
মা আমাকে দেখলেই বিরক্ত বোধ করতেন।
আমার দিকে ফিরেও চাইতেন না।
খুব কষ্ট পেতাম মায়ের ব্যাবহারে।
আবার দেখতাম লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে
চোখের জল ফেলতে।
কিছুতেই বলতেন না কেন কাঁদছেন।
তখন আমার বয়স তেরো,
সম্পূর্ণ নারী হলাম আমি।
বড়ো হয়ে ওঠার সাথে সাথে
হঠাৎ আমার শারীরিক কিছু পরিবর্তন
ঘটতে থাকে।
খুব ভয় পেয়ে যাই।
বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী করবো।
ভয়ে কুঁকড়ে মায়ের কাছে ছুটে গেলাম,
মা বললেন,
"পালিয়ে যা, পালিয়ে যা।"
সেই প্রথম আমার খুব রাগ হল মায়ের ওপর,
মা কী পাগল হয়ে গেলেন?
ঐ একভাবে বিছানায় পরে থাকতে থাকতে কী
বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেলেন?
কেন করছেন আমার সাথে এমন ব্যবহার?
মা কী শুধু একাই কষ্ট পাচ্ছেন?
আমি আর বাবা ও কী কষ্ট পাচ্ছিনা?
কৈ আমাদের কোথাতো মা একটি বার ও
ভাবছেন না?
মা তো এমন ছিলেন না।
কত সুখী, হাসি খুশি একটি পরিবার ছিল
আমাদের,
কোথায় যেন সব লুপ্ত হয়ে গেল।
খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার।
ক্রমশঃ

0 Comments