বডি শেমিং
- মমতা মম
শুধু কাউকে মোটা বল্লেই বডি শেমিং হয় না।এই তুই এত চিকন কেন,খাটো কেন,এত রোগা কেন?তোকে দেখতে তো এইটের বাচ্চাদের মতো লাগে।তোকে দেখতে দুই বাচ্চার মা লাগে। কিংবা তোর এইটুকু চেহারায় এই ড্রেস মানায় না।ইত্যাদি ইত্যাদি...
এই সবই বডি শেমিং।
আপনাকে বুঝতে হবে মানুষ কেউ ইচ্ছে করে খাটো হয় না,লম্বা হয় না,মোটা হয় না,চিকন হয় না।কেউ যদি অনেক মোটা হয় তবে অল্পবয়সের হলেও বয়সের তুলনায় তাকে অনেক বড় দেখায়।আবার কেউ যদি অনেক চিকন আর খাটো হয় তাহলে তার বয়সের তুলনায় অনেক ছোট/বাচ্চা মনে হয়।কিন্তু তাই বলে তো আপনি তাকে তার চেহারা নিয়ে অসম্মান করতে পারেন না।মানুষের কর্মের উপর তার নিয়ন্ত্রণ থাকে।কিন্তু তার চেহারার উপর নয়।কেউ ইচ্ছে করে লম্বা,খাটো,মোটা,চিকন, কালো,ফর্সা হয় না।এটা সৃষ্টিকর্তার দান(যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী)।
এখন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ,মানে যে আঠারো বছরের উপরে হয়ে গেছে তাকে যদি আপনি তার চেহারা নিয়ে বাচ্চা লাগছে,এই লাগছে,সেই লাগছে মজা করে বলেন সে ব্যক্তি অবশ্যই মনে মনে কষ্ট পাবে।কারণ আপনি তাকে তার বয়স অনুযায়ী সম্মান দিচ্ছেন না।আবার অনেকে কম বয়সে মোটা হলেও তোকে ৪০ বছরের মহিলা লাগছে কিংবা পুরুষ লাগছে এসব বল্লেও ব্যক্তিটি মনে মনে কষ্ট পায়।
আবার অনেকে আছে যাদের একটু পর পর ক্ষিধে পায়।কিন্তু খাবারের কথা বল্লেই পাশের সবাই বলতে থাকে এত খাস কেন?আপনাকে বুঝতে হবে কেউ বেশি খেতে চায় না।মানুষ বেশি খেতেও পারে না।তার পেটে যতটুক জায়গা নেয় ততটুকুই খায়।তাহলে তার পেটে ক্ষিধা থাকলে সে তো খাবেই।সে তো আপনার টাকায় খাচ্ছে না।তাহলে আপনার এতো বিরূপ মন্তব্য করা লাগবে কেন?
আমাদের চারপাশের মানুষদের প্রতিনিয়ত এসব মজা করে কথা বলা চলতেই থাকে।তাদের কাছে এটা জাস্ট ফান।কিন্তু তাদের এসব মজার নামে যে ব্যক্তির চেহারা বা খাবার খাওয়া নিয়ে কটূক্তি করা হচ্ছে এবং ব্যক্তিটি মনে কষ্ট পাচ্ছে সেটা তাদের মাথাতেই ঢুকে না।যার জন্য দেখা যায় অনেক ছেলে মেয়ে খাটো হলে লম্বা মানুষদের পাশে যেতে চায় না,মোটা হলে মিশতে চায় না,কালোরা ফর্সাদের পাশ দিয়ে যেতে চায় না।তারা হীনমন্যতায় ভুগে।তখন তারা বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়-স্বজন থেকে দূরে সরে যায়।অনেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে চায় না।তাদের জগতটা ছোট হয়ে যায়।তারা হতাশায় ভুগতে থাকে।এরফলে অনেকে আত্মহত্যাও করে।আবার অনেকে বাহিরে গিয়ে পেটে ক্ষিধা থাকলেও লজ্জায় বলতে পারে না,অন্যের সামনে খেতে পারে না।কারণ তাকে খাবার নিয়ে কটূক্তি করা হবে।
এক্ষেত্রে অনেকে সাজেশন দিবেন নিজেকে এসব ভাবা থেকে সরিয়ে আনতে হবে।নিজের মতো করে চলতে হবে।আমার কথা হচ্ছে সবাই সেটা পারে না।কারণ মুখে বলা যতটা সহজ,সমাজের মানুষের কথা এড়িয়ে চলা অধিকাংশের পক্ষেই তত কঠিন।
আর এসবের জন্য আমরা দায়ী।
তাই অন্যের চেহারা কিংবা খাওয়া নিয়ে মজা করার আগে সে ব্যক্তিটি কষ্ট পেতে পারে এটা আগে ভাবুন।মানুষকে তার বয়স ও কর্ম দিয়ে মর্যাদা দেখান।তবেই সব মানুষের মর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
0 Comments