মনুষ্যত্ব (৩)
- কাকলি চক্রবর্তী
সুতপা জবা কে কেবল একটাই প্রশ্ন
করে চলেছেন,
কেন জবা নারায়ণ শিলা ধরতে গেল?
আর কেনই বা সিংহাসন স্পর্শ করেছে?
যত বার ই প্রশ্ন করা হয়,
কাঁদতে থাকে জবা।
রিভা যাঁঝিয়ে ওঠে।
মাকে বলে,
"এবার ওকে পুলিশে দাও।
এমন কী বিরাট অপরাধ টা করেছে শুনি,
আর কত কাঁদবে ও?"
সুতপার স্বাশুড়ি মা কে শান্ত করার সব প্রচেষ্টাই
বিফলে যায়।
দিন দিন অনুভা অসুস্থ হয়ে পরছিলেন।
একদিন জবা তার ঘরের দরজার বাইরে এসে
অনুভাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
"ঠাম্মা আমি চলে যাবো, তুমি রাগ করো না।
সে দিন ঠাকুর ঘরের সামনে দিয়ে যেতে গিয়ে দেখি,
একটা বড়ো কাঁকড়া বিছে ঠাকুর ঘরে ঢুকে,
আশ্রয় নিলো তোমার নারায়ণ শিলার
সিংহাসনের নিচে।
তুমি পুজোয় বসবে বলে আসছিলে।
তোমার সামনে গেলে আমায় দূর করে দিতে।
আমার কোনো কথাই শুনতে না।
মা, দিদি কেউ বাড়ি ছিল না,
আমি কাকে বলতাম?
বিছে টা যদি তোমায় কামড়ে দিতো?
তুমি তো দেখোনি বিছেটা কে।
তবুও আমি তোমায় বলার চেষ্টা করেছিলাম।
একটু মনে করে দেখো,
আমি তোমার সামনে গিয়ে তোমায়
থামাতে চেয়েছিলাম,
বলতে চেয়েছিলাম বিছে টার কথা।
কিন্তু তুমি কিছু শোনার চেষ্টাই করলে না,
আমাকে একটা কথাও বলতে দিলে না।
দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলে।
আমার আর কিছু ভাবার সময় ছিলোনা,
তুমি ঠাকুর ঘরে ঢুকে
এগিয়ে গেলে নারায়ণের সিংহাসনের দিকে।
আর আমিও কিছু না ভেবে ঢুকে পড়লাম
ঠাকুর ঘরে।
বিছে টাকে খুঁজতে সিংহাসন সরালাম,
বিছেটা ফুল বেলপাতার নিচে ঢুকে গেল।
সিংহাসনের নিচে একটা সরু ফাটল।
সেই ফাটলের মধ্যে খুব তাড়াতাড়ি
সেটা লুকিয়ে পরলো।
আর ঠিক তখন তুমি এমন চিৎকার শুরু করলে
যে বিছেটাকে আর টেনে বার করতেই পারলাম না।
সেই চিৎকার চেঁচামেচি তে সত্যি টা বলাও
হলোনা। এখনো সেটা ঠাকুর ঘরেই আছে।
আমি চলে যাবো এই বাড়ি ছেড়ে,
পারলে বিছেটা কে সরিয়ে দিয়ো।
আমায় ক্ষমা করে দিয়ো ঠাম্মা।
হয়তো না বুঝেই তোমায় কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। "
অনুভা বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে সব শুনলেও
কোনো সাড়া শব্দ করলেন না।
পরের দিন চলে গেল জবা।
গ্রাম থেকে তার বাবা এসে তাকে নিয়ে গেলেন,
আর বলে গেলেন তারা গ্রামে জবার বিয়ের ঠিক
করেছেন।
চোদ্দ বছর,
তাতে কী?
গ্রামে এই বয়সেই বিয়ে থা হয়,
আর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পোলা পান।
একটা মেয়ের আর কী বা চাই?
তারা জবার বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্র ও দিয়ে গেলেন।
তারা জবার স্বামী হিসাবে যাকে মনোনীত করেছেন,
তিনি বয়সে প্রায় জবার বাবার বয়সি।
ভ্রদ্র লোকের প্রথম স্ত্রী মারা যান দুই সন্তান রেখে।
বেশ কিছু জমি জমার মালিক,
তেল কল, ধান কল কী নেই তার।
তিন পুরুষ বসে খেতে পারবে।
জবা হাঁড়ি কাঠে বলি হতে চলেছে জেনেও
কিছু করার নেই সুতপার।
এতদিন পর ঠাকুর ঘরে আবার পা রেখেছেন অনুভা,
আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরেও এসেছেন,
খেয়েছেন।
নিজ হাতে ঠাকুর সাজিয়েছেন।
গোপাল সেবা, নারায়ণ সেবা ও করেছেন নিয়ম করে।
নাতনি কে নিজে বসে খায়িয়েছেন।
আর চটাতে চান না সুতপা
অনুভা কে।
অনেক কষ্টে তো সব ঠিক ঠাক হয়েছে,
আবার সব গুলিয়ে দেওয়া যাবে না কিছুতেই।
রিভা কে বোঝানো যাচ্ছে না,
সে কেঁদেই চলেছে।
সে জবার দূরে চলে যাবার জন্য
আড়ালে আবডালে ঠাম্মা কেই দায়ী করছে।
মাকে বলছে,
"জবা কে নিয়ে এসো "।
অনুভার সাথে সম্পর্ক খুব খারাপ হচ্ছে রিভার।
ঠারে ঠোরে সে দু এক কথা
শুনিয়েও দিতে ভোলে না ঠাম্মা কে।
ক্রমশঃ
0 Comments