মনুষ্যত্ব(২)

মনুষ্যত্ব(২)

- কাকলি চক্রবর্তী 



অনুভা জবা কে উদ্দেশ্য করে  বলে ওঠেন,

"এই তু্ই হাঁ করে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন রে?

তোর কাজ নেই?

রান্না ঘরে যা, নইলে সাবান কাচ গে যা।"

খাবার টেবিলের পাশে জবা কে দাঁড়াতে দেখলেই

মাথায় রক্ত চড়ে যায় অনুভার।

বিশেষ করে নাতনির খাবার সময়।

রিভার খাবার সময় নড়তেই চায় না বেহায়া 

মেয়েটা।

ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে পাশে।

রিভার মা মানে অনুভার বৌমা সুতপা তো আবার এক কাঠি বাড়া.।

সে জবা কে খাবার টেবিলে বসিয়েই ছাড়বে।

"তুইও বসে যা জবা, রিভার পাশে বসে

এক সাথে খেয়ে নে।"

জবা মাথা নিচু করে বলে,

"না মা আমি পরে খাবো, দিদির পর আমি খাবো "।

দেখে গা জ্বলে যায় অনুভার।

মনে হয় কানটি মুলে,

স্বজরে একটা চড়  কষান গালে।

যদি নাই খাবে,

তবে দাঁড়িয়ে থাকা কেন?

আর এই রিভা।

কিছুতেই মাছ খেতে চায় না।

ঠিক টাল বাহানা করে মাছটা গোছিয়ে দেবে

জবার হাতে।

কী হ্যাংলা রে বাবা, জন্মে যেন খায় নি।

নাতনির খাওয়া শেষ হলে উঠে যেতেন অনুভা।

তিনি জানতেও পারতেন না

 জবা রিভার  এঁটো পাতে বসে

প্রতিদিন খাবার খায়।

সুতপা তাকে পরিপাটি করে খেতে দিলেও

সে খাবে না।

সে ঐ রিভার এঁটো  থালাতেই খাবে।

রিভার সব কাজ সে আপন হাতে করে,

জোর করে সুতপার হাতে হাতে কাজ করে দেয়।

মানা করলেও শোনে না।

অনুভা কিন্তু কোনো কিছুতেই ভোলার পাত্রী নন।

তিনি জবার একটা সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

আর যাই ঘটে যাক না কেন,

জবা তার ঘরের ত্রী সীমানা মাড়াবে না।

কোনো মতে ভুলেও ঠাকুর ঘরে পা দেবে না।

অনুভার কোনো খাবার স্পর্শ অবধি করবে

না মেয়েটি।

নিরামিষ ভোজী অনুভার খাবার রান্না করার

অনুমতি এক মাত্র তার বৌমার।

কোনো মতেই যেন তার কোনো জিনিস পত্র

ছুঁতে না পারে জবা।

এত প্রতিবন্ধকতা সত্বেও  একদিন এমন একটা

ঘটনা ঘটলো,

যা অনুভা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেন না।

কোনো এক অজ্ঞাত কারণে জবা ঠাকুর ঘরে ঢুকেছে।

শুধু ঢুকেছে ই নয়,

নারায়ণ শিলা হাতে তুলেছে।

সরিয়েছে নারায়ণের সিংহাসন।

অনুভা সেদিন  ক্রোধে জ্বলে পুড়ে ছাই হবার উপক্রম।

যে কর্ম কোনোদিন তার নিজের নাতনি বা

বাড়ির অন্য কেউ করার কথা কল্পনাও করতে

পারে না,

এই মেয়েটা কী ভাবে যে করতে পারে,

সেটাই তিনি ভেবে উঠতে পারছিলেন না।

রাগে, দুঃখে বোবা হয়ে গেলেন,

আর কোনো দিন পা রাখলেন না ঠাকুর ঘরে।

শুধু ঠাকুর ঘর ই কেন,

নিজেকে ঘর বন্দী করে ফেললেন একেবারে।

খাওয়া দাওয়া প্রায় ত্যাগ করলেন।

জবার এমন মতিভ্রম কেন হলো

যখনি জানতে চাওয়া হচ্ছে,

জবা কেঁদে ভাসাচ্ছে।

বার বার বলছে,

"আমায় দেশে পাঠিয়ে দাও,

আমার জন্য ঠাম্মা কষ্ট পাচ্ছে,

আমি এখানে থাকতে চাই না।"

সুতপা পড়েছেন সমস্যায়।

কিছুতেই স্বাশুড়ি মায়ের ক্রোধ শান্ত হচ্ছে না।

এভাবে চলতে থাকলে উনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

এদিকে জবা কে রিভা কিছুতেই কাছ ছাড়া করবে না।

সে জবা কে চোখে হারায়।

জবা না থাকলে তার যেন কিছুই হয় না।


ক্রমশঃ

Post a Comment

0 Comments