ত্রিশ পেড়োনো মন

 ত্রিশ পেড়োনো মন

- রাজিয়া সুলতানা



মাঝে মাঝে  একদম একা বসে থাকি। 

কিছু করতে ইচ্ছা করে না কাউকে কিছু বলতে ইচ্ছা করে না। 


দিনশেষে একটা ক্যালকুলেশনে আসলাম  যত যাই উজার করে দাও না কেন একটা সময়ে গিয়ে সবাই যেটা চায় সেটাই  করতে হবে। 


যাদেরকে সবচেয়ে বেশি সুখী রাখতে চাইবেন তারাই সুন্দর করে আপনার সময় গুলোকে নষ্ট করে দেওয়ার পাঁয়তারা করবে। 


সবার চাওয়া পাওয়ার হিসাব রাখতে রাখতে নিজের জীবনটাকে উজার করে দেওয়াই বোকামি। 


একটা সময় গিয়ে কেউ থাকবে না। শুধু নিজের সময়গুলো ব্যয় করা হলো। জীবনের দুটো ভাগ শুধু চলে যায় সবার কথা রাখতে রাখতে। আরেক ভাগে তো শুধু অসুস্থতা হসপিটাল আর মৃত্যু। তখন আর সব নিজের মত হয়ে লাভটা কি তখন তো আর উপভোগ করার মতো বল শক্তি শরীর কোনটাই থাকেনা। 

অযথা 

অযথা 

অযথা 

অপাংক্তেয়    কেউ যদি এই কথাটার সঠিক অর্থ বুঝত লজ্জায়  কারও ব্যক্তিগত জীবনে হয়তো নাক গলা তো না।


ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ বছরের মেয়েগুলোর বড়ই দূর্দশা। একটু আবেগ প্রকাশ করলেই পৃথিবী বলে ছিঁদকাঁদুনে,ন্যাকা। দুনিয়ার তাবৎ নৈরাশ্য,হতাশা,বন্ধুহীনতা নিয়ে একগাল সুখী সুখী ভাব করে শরীরে মেদ জমানোই যেন একমাত্র কাজ।


এরা স্বামীকে ভালোবাসতে গেলে কর্তা সাহেব মুখ বাঁকিয়ে বলেন, ন্যাকামি রাখ। ওসব করার বয়স ছেড়ে এসেছো। আবার চেহেরায় গাম্ভীর্য আনলে বলে, একেবারে রসকষ হীন, বুড়ো হয়ে গেলে নাকি?


বিয়ে না করলে তো মরার উপর খাঁড়ার ঘা। ত্রিশ বছরের মেয়ে বিয়ে না করায় পুরো সমাজের জাত গেল,ঘুম হারাম হয়ে গেল। ত্রিশ বছর বয়সে সে ওয়েল এস্টাবলিশ হলেও তার মত বোঝা আর একটাও থাকে না। সবাই এমন ভাবে উঠে পড়ে লাগে যেন তার বিয়ে হলেই সবাই বেঁচে যায়। বিয়েতে সে সুখী হল কি দুঃখী  হল তাতে কিছু যায় আসে না। বিয়ের না করে সে সুখে থাকলেও সবার চক্ষুশূল।


আর এই বয়সে যদি কেউ প্রেম করে তাহলে তো মুশকিল। ছি ছি রবে চতুর্দিক ভরে যাবে। এরা প্রেমের ক্ষেত্রে অচ্ছুৎ। না স্বামীর কাছে পায় প্রেম(দৈহিক প্রেম ছাড়া), না আর কারো কাছে। যার কাছে প্রেম চায়, সে-ই মনে করে শরীরের প্রেম চাচ্ছে। শরীর টা ছাড়া আর কিছুই যেন নেই। তারও যে মনের খিদে হতে পারে সেটা কেউ দেখতেও চায় না,বুঝতেও চায় না।


ত্রিশ বছরের পর মেয়েরা চায় কেউ তাকে পাগলের মতো ভালবাসুক। তাকে প্যাম্পার করুক।আশেপাশের মানুষগুলো একটু যত্ন নিক।আন্তরিকতা দেখাক। কারণ এই বয়সে এসে না তার শারীরিক সৌন্দর্য ঠিক থাকে, না সে নিজের এই পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে। কথায় বলে বুড়িও না, ছুঁড়িও না। সে আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে তার নিজের পরিবর্তিত নিজেকে মেনে নিতে। নিজের সাথেই নিজে যুদ্ধ করতে  থাকে। এহেন মানসিক দ্বন্দ্বে পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব এমনকি তার নিজের মানুষটাকেও পাশে পায় না। 


অদ্ভুত সেসব সময়!!

Post a Comment

0 Comments